বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১২

চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রিয়াদ তালুকদার, বিশেষ প্রতিনিধি :: দেশীয় চলচ্চিত্রের চলমান ক্রান্তিলগ্নে প্রতিবছরের ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা এবং প্রথম চলচ্চিত্র দিবসে ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান উদ্দীপনা তৈরি করেছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস মঙ্গলবার ৩ এপ্রিল বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্যসচিব হেদায়েতউল্লা¬হ আল মামুন স্বাগত বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে এফডিসি প্রতিষ্ঠায় তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আনা বিল পাসের দিনটি; সেটি ছিল ৩ এপ্রিল।

“প্রাদেশিক আইন পরিষদে ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা’ বিল উত্থাপন করেন তিনি। আজকের এই দিনেই [৩ এপ্রিল] বিলটি আইন পরিষদে অনুমোদিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় এফডিসি।”

২০১০ সালের সেরা অভিনেতা হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। আর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পূর্ণিমা। ওই বছরের জন্য এই দুজনসহ ২৫ জন শিল্পী ও কলাকুশলী নির্বাচিত হন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।

পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত এফডিসিই বিগত ছয় যুগ ধরে চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার এ দূরদর্শী উদ্যোগকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে আমরা এ বছর থেকে ৩ এপ্রিল থেকে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস’ হিসেবে পালন করছি।” শেখ হাসিনা বলেন, অনুষ্ঠানে তারকা মেলায় উপস্থিত হতে পেরে তিনি আনন্দিত। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১০ বিজয়ীদের অভিনন্দন জানান।

বিশ্বে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয় ১৮৯৫ সালে। তবে ১৯৩০ সালের আগ পর্যন্ত চলচ্চিত্র সবাক হয়নি। ১৯৫৬ সালে ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় ফরিদুর রেজা সাগর প্রযোজিত ‘গহীনে শব্দ’। এই চলচ্চিত্রের জন্য খালিদ মাহমুদ মিঠু শ্রেষ্ঠ পরিচালক নির্বাচিত হন।

শাকিব খান সেরা অভিনেতা হয়েছেন ‘ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য। ‘ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না’ চলচ্চিত্রের অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান পূর্ণিমা। ‘অবুঝ বউ’ চলচ্চিত্রের জন্য সুজেয় শ্যাম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক এবং মোঘল-এ-আজম চলচ্চিত্রে ‘ও জীবন তুচ্ছ ...’ গানের জন্য ইমদাদুল হক খোকন শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালকের পুরস্কার পান। ‘জীবন মরণের সাথী’ চলচ্চিত্রে এমএ আলমগীর শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেতা এবং ‘ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রের জন্য রোমানা শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী নির্বাচিত হন। ‘ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে ‘বুকেরই ভিতরে যতনও...’ গানের জন্য এসআই টুটুল শ্রেষ্ঠ গায়ক, একই চলচ্চিত্রের ‘ভালবেসেই সবার সাথে...’ গানের জন্য শাম্মী আক্তার শ্রেষ্ঠ গায়িকা এবং শেখ সাদী খান শ্রেষ্ঠ সুরকার নির্বাচিত হন। ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ চলচ্চিত্রে ‘রূপালী রাত নেমেছে...” গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার নির্বাচিত হন কবীর বকুল।

এছাড়া শ্রেষ্ঠ খল চরিত্রে মিজু আহমেদ, কৌতুক চরিত্রে আফজাল শরীফ, শিশু শিল্পী প্রার্থনা ফার্দিন দিঘী, কাহিনীকার জাকির হোসেন রাজু, চিত্রনাট্যকার নারগিস আক্তার, সংলাপ রচয়িতা জাকির হোসেন রাজু, চিত্রগ্রাহক হাসান আহমেদ, শব্দগ্রাহক কাজী সেলিম, সম্পাদক মজিবুর রহমান দুলু, শিল্প নির্দেশক মহিউদ্দিন ফারুক, মেকাপম্যান আব্দুর রহমান এবং শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জায় বিবি রাসেল পুরস্কার পান।

ভিডিও পাইরেসি, অশ্লীল ছবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে কিছু মুনাফালোভী ব্যক্তি ফর্মুলাভিত্তিক অশ্ল¬ীল নকল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করতে থাকে। সম্ভাবনাময় এ শিল্পটিতে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। একে একে বন্ধ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহ।

“দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে এফডিসিও লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তার কার্যকারিতা হারায়। যোগ হয় নতুন উপসর্গ ‘ভিডিও পাইরেসি।” “২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আমরা প্রথমেই অশ্ল¬ীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন এবং চলচ্চিত্রের ভিডিও পাইরেসি বন্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স ও মনিটরিং সেল গঠন করি,” যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এর ফলে ভিডিও পাইরেসি বন্ধ হয়েছে। কপিরাইট আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছি। অশ্ল¬ীল ছবির নির্মাণ ও প্রদর্শন বন্ধ হয়েছে।

সরকার ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের পক্ষে জানিয়ে তিনি বলেন, ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি হলগুলোর পরিবেশও উন্নত করতে হবে। “এজন্য হল মালিকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।” ক্রিকেট, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “চলচ্চিত্রেও পারব।” (জিটিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
Ruby